বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা সহিংস আন্দোলন এবং সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, এই আন্দোলনে প্রায় ৩০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্র ও বিক্ষোভকারী ছিলেন।
সহিংসতার সূত্রপাত
এই অস্থিরতার শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে। কোটা ব্যবস্থায় মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য নির্দিষ্ট অংশ রাখা হয়েছিল, যা বিক্ষোভকারীদের মতে বৈষম্যমূলক। পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে, আন্দোলন সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। আন্দোলনকারীরা সরকারের ১৫ বছরের শাসনকে “একনায়কতন্ত্র” হিসেবে অভিহিত করে।
পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগ
সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ২:৩০ টায় শেখ হাসিনা সামরিক বিমানে করে ঢাকা ছেড়ে যান। সামরিক বাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণে নিশ্চিত করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আলোচনা চলছে।
পরিস্থিতি এখন কেমন?
শেখ হাসিনার প্রস্থান দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। একদিকে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে “স্বাধীনতার” আনন্দ উদযাপন করছেন, অন্যদিকে কিছু এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। গণভবনে ছাত্র আন্দোলনকারীদের প্রবেশ এবং ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। তবে সামরিক বাহিনী এবং পুলিশের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন আর কোনো সহিংসতা না হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সহ আন্তর্জাতিক নেতারা এই সহিংসতার নিন্দা করেছেন এবং বাংলাদেশে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার এই প্রস্থান বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট: কী হতে পারে ভবিষ্যৎ?
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের পর বাংলাদেশ এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি। সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আশ্বাস দেওয়া হলেও, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
আন্দোলনকারীদের দাবি
আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি ছিল সরকারের পদত্যাগ ও একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন। বিক্ষোভকারীদের মতে, শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনকাল ছিল একনায়কতান্ত্রিক। তারা চান একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন। আন্দোলনের অন্যতম নেতা বলেছেন, “আমরা এমন একটি দেশ চাই যেখানে জনগণের মতামত গুরুত্ব পাবে।”
সামরিক বাহিনীর অবস্থান
বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী বর্তমানে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তত্ত্বাবধান করছে। সামরিক বাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করব।” তবে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিভিন্নমুখী মতামত রয়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন যে, সামরিক শাসন দীর্ঘস্থায়ী হলে গণতন্ত্রের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা হবে।
আন্তর্জাতিক চাপ
বাংলাদেশে চলমান সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের সরকার বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবও একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দরকার। নতুন নেতৃত্ব দেশের তরুণ প্রজন্মকে প্রাধান্য দিয়ে একটি টেকসই রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করতে পারে। তবে এর জন্য প্রয়োজন হবে সঠিক পরিকল্পনা এবং স্বচ্ছ নির্বাচন।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি চরম সংকটের মুখে পড়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে এবং রপ্তানি খাতও ক্ষতিগ্রস্ত।